
সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে শক্তিশালী হওয়াই লক্ষ্য
ফের মাঠে নামছে এনসিপি
- আপলোড সময় : ০৯-১০-২০২৫ ০৩:৫৩:৪৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৯-১০-২০২৫ ০৩:৫৩:৪৬ অপরাহ্ন


সামনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের আগেই সাংগঠনিকভাবে নিজেদের দলকে চাঙ্গা করতে চাইছে এনসিপি। সেইলক্ষে এবার মাঠে নামতে যাচ্ছে দলটি। যদিও সাংগঠনিকভাবে এখনও শক্তিশালী হতে পারেনি দলটি। এরইমধ্যে দেশজুড়ে সমন্বয়ক কমিটিগুলোতে নানা পরিকল্পনা দিয়ে দক্ষ করে মাঠ গোছাতে চায় এনসিপি। কেন্দ্রেও আহ্বায়ক কমিটি। দলটি করতে পারেনি উপদেষ্টা পরিষদ, গঠন হয়নি দলের গঠনতন্ত্র। সবমিলিয়ে দলটি সাংগঠনিকভাবে আশানুরূপ কিছু দেখাতে পারেনি।
তবে এবার সাংগঠনিকভাবে নিজেদের শক্তিশালী করতে সারা দেশজুড়ে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাবে দলটি। এরই মধ্যে ১০ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি, দলীয় প্রতীক চূড়ান্ত ও সংস্কারের ইস্যু সামনে রেখেই অক্টোবরের মাঝামাঝিতে মাঠে নামবে এনসিপির একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দলীয় সূত্র মতে, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশের পর জুলাই অভ্যুত্থানের অগ্রভাগে থাকা তরুণ নেতারা এখন দলের সাংগঠনিক কাঠামো, সেøাগান, ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। দলের এই মূল বিষয়গুলো চূড়ান্ত করার কাজ চলছে এবং শিগগিরই সেগুলো ঘোষণা করা হবে বলে দলের সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন। আত্মপ্রকাশের পর এনসিপি’র সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে তা স্থবির হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ জেলা, উপজেলা ও মহানগরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। কয়েকটি জেলায় প্রস্তুতি কমিটি দিলেও সেগুলো অকার্যকর হয়ে আছে। একদিকে সাংগঠনিক দুর্বলতা, অন্যদিকে আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক চূড়ান্ত করার জটিলতা-সবমিলিয়ে নতুন দলটি দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে অক্টোবর মাসেই তৃণমূলে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। জেলা ও উপজেলার সমন্বয়ক কমিটিগুলোকে আহ্বায়ক কমিটিতে রূপান্তর করা হবে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আহ্বায়ক কমিটিতে গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত নেতৃবৃন্দকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত দলের সমন্বয় সভায় জেলা, উপজেলা ও মহানগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তৃণমূলের করুণ দশার কথা ফুটে ওঠে এবং সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি অনেকে তুলে ধরেন। স্বয়ং দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও এই দুর্বলতা স্বীকার করে নেন। তিনি সাংগঠনিক শক্তি অর্জনে ব্যর্থতার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, এখানে নানা বাস্তবতা ছিল। গত এক বছর বাংলাদেশ নানা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে পার হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক দায়িত্ব আমাদের ওপর এসে পড়ে। আমরা আত্মমূল্যায়ন করছি, যাতে সামনে ভুল না হয়। তিনি আরও যোগ করেন, দল হিসেবে এনসিপি সাংগঠনিকভাবে এক বছরে যতটা শক্তিশালী হওয়ার কথা ছিল, তা অর্জন করতে পারেনি। সভার পর থেকেই দলকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে এনসিপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, বর্তমানে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিষয়ে প্রধান দুটি ইস্যু রয়েছে। একটি হলো-দলীয় প্রতীক নিয়ে জটিলতা, অন্যটি হলো-সংস্কার ইস্যু। এর পাশাপাশি সাংগঠনিক বিস্তৃতি ঘটাতে সারা দেশে অক্টোবরের মাঝামাঝিতে আমাদের কিছু কর্মসূচি আসতে পারে। জেলা-উপপজেলায় আমাদের সমন্বয়ক কমিটি আছে, এখন আমরা আহ্বায়ক কমিটি করতে যাচ্ছি-যোগ করেন তিনি।
১০ বিভাগে নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক : এদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ১০ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে তাদের অন্য সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রংপুর বিভাগে দায়িত্ব পেয়েছেন ড. আতিক মুজাহিদ, রাজশাহীতে ইমরান ইমন, সিলেটে এহতেশাম হক, ময়মনসিংহে আশেকিন আলম, ঢাকায় সাইফুল্লাহ হায়দার, ফরিদপুরে নিজাম উদ্দীন, চট্টগ্রামে এস এম সুজা উদ্দিন, কুমিল্লায় মো. আতাউল্লাহ, খুলনায় ফরিদুল হক এবং বরিশালে অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন। এই ১০ নেতাকে আগামী এক মাসের মধ্যে দেশের সব মহানগর ও জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব এস এম সুজা উদ্দিন বলেন, সারা দেশে যারা গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন, জেলা বিপ্লবে অংশ নিয়েছিলেন, একটা সময় পর্যন্ত তারা সামনে ছিলেন। এখন অনেকে অভিমান করে পিছিয়ে গেছেন। সেই সব মানুষকে আমরা পুনরায় যুক্ত করব। সমাজে অভিজ্ঞ যেসব রাজনীতিবিদ বিভিন্ন কারণে বঞ্চিত হয়েছেন এবং ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে যাদের লড়াই-সংগ্রাম আছে, সেসব মানুষও আবার দলে যুক্ত হবেন। তিনি আরও বলেন, যেসব জেলা ও উপজেলায় এখনও সমন্বয় কমিটি হয়নি, সেখানে খুব দ্রুত তা দেওয়া হবে। আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংলাপের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করব। কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না। এলাকার মানুষ যাদের যোগ্য মনে করবেন, তাদেরকেই আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে নিয়ে আসা হবে।
সুজা উদ্দিন তার ভিশন তুলে ধরে বলেন, আমরা সমাজের সব অংশীজনের সঙ্গে কথা বলতে চাই এবং ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে চাই। আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ চট্টগ্রাম আগামী দিনে এমন একটি নতুন নেতৃত্ব দেবে, যা বাংলাদেশ পুনর্গঠনের কাণ্ডারি হবে এবং আগামীর বাংলাদেশের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করবে। প্রত্যেকটি থানা, উপজেলা ও জেলায় আমাদের সংগঠনের নেতৃত্বে যারা থাকবেন, তারা সেখানকার জনগণের কথা বলবেন, তারা ওখানকার রাজনীতির কথা বলবেন।
জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের ৫০টি প্রতীকের মধ্য থেকে যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার জন্য এনসিপিকে চিঠি দিয়েছিল এবং ৭ অক্টোবরের মধ্যে প্রতীক চূড়ান্ত করতে বলেছিল। তবে, এনসিপি ইসির দেওয়া ওই ৫০টি প্রতীকের তালিকা প্রত্যাখ্যান করেছে। দলটি ই-মেইলের মাধ্যমে ‘শাপলা’ প্রতীকটিই চেয়েছে। সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন, শাপলা ছাড়া অন্য কোনো প্রতীক নিয়ে দলটি ভাবছে না।
দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, কেন্দ্রীয় কার্যক্রম চলমান থাকলেও তৃণমূল এখনও সেভাবে গোছানো সম্ভব হয়নি। আসন্ন নির্বাচনের আগে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে অক্টোবর মাসেই দলটি পুরোদমে মাঠে নামছে। বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছে এবং দ্রুতই জেলা ও উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের মান-অভিমান ভাঙিয়ে পুনরায় দলে ফেরানোর কাজটিও নির্বাচনের আগে সম্পন্ন করতে চায় এনসিপি। তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা মন্তব্য করেছেন, দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি না থাকলেও সিনিয়র নেতারা নিজেদের নির্বাচনী মাঠ গোছানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, দল যদি শক্তিশালী না হয়, কোনো নেতাই শক্তিশালী হতে পারবেন না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ